ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহদিুল ইসলাম খানকে হত্যায় জড়িত অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এরা হলেন নগরীর জামতলা পোড়াবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রিফাত ও নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এলাকার মো. মহসিন মিয়া।
শনিবার রাত ৮টায় পিবিআইয়ের ময়মনসিংহ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর জামতলা পোড়াবাড়ি এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে রিফাতকে ও আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে মহসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত তৌহিদুল নেত্রকোণার আটপাড়া থানার রামেশ্বরপুর গ্রামের সাইকুল ইসলামের ছেলে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার জন্য ময়মনসিংহের শহরের গোহাইলকান্দি তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় সোলায়মানের বাসায় মেস ভাড়া নিয়ে থাকতেন তৌহিদুল।
পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘রিফাত, আশিক, মহসিন ও অন্তর নামে এই চারজন একসঙ্গে চলাফেরা করত। গত বছরের ১ মে রাত ৩টার দিকে তারা সবাই মহসিনের বাসায় ইয়াবা সেবন করে। ইয়াবা খাওয়া শেষ হলে আশিক বলে, চল একটা মোবাইল চুরি করে নিয়ে আসি। তখন মহসিনের বাসা থেকে অন্তর তার নিজের বাসায় চলে যায়।
‘রিফাত, আশিক ও মহসিন তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকার সোলায়মানের ওই বাসায় যায়। বাসার নিচ তলার মেসের রুমে শিক্ষার্থী তৌহিদ থাকত এবং আশিক তাকে আগে থেকেই চিনত। ওই তিনজন বাসার ছাদ দিয়ে টপকে মেসে তৌহিদের রুমে যায়। তখন তৌহিদ রোজার মাসে সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং তৌহিদের স্মার্ট ফোনটি জানালার পাশে টেবিলের উপর রাখা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে মহসিন জানালা দিয়ে মোবাইলটি নিতে গেলে তৌহিদ দেখে ফেলে। পরে তৌহিদ দরজা খুলে বাইরে আসলে আশিক তৌহিদকে জাপটে ধরে এবং রিফাত হাত ধরে। তখন মহসিন দেড় হাত লম্বা লোহার রড দিয়ে তৌহিদের বুকে আঘাত করে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তৌহিদুল হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহসিন। ছবি: নিউজবাংলা
পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আশিকও তৌহিদকে মেরে রক্তাক্ত করে। এমন অবস্থায় তৌহিদ চিৎকার শুরু করলে সবাই দ্রুত পালিয়ে মহসিনের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাসার মালিক তৌহিদকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় দিনই নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম কোতোয়ালি মডেল থানায় বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি অধিকতর তদন্তভার আসে পিবিআই ময়মনসিংহের কাছে। কিন্তু আসামিরা গা ডাকা দিয়েছিল।’
পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ছিল। সামান্য একটি মোবাইল চুরি করতে গিয়ে শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এদের ধরতে নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হয়েছে। শুক্রবার তারা ময়মনসিংহে নিজের বাসায় আছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শনিবার তাদেরকে ময়মনসিংহের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’